ঐতিহ্যের পুজো , ওপর বাংলার পুজো এপার বাংলায় । বর্তমান পুজোটি খুব একটা প্রাচীন পূজো নয় , আগে বাংলাদেশ-এ এই পূজো হত । সেটি বহু বছর হয়েছিল , কিন্তু বহুবছর আগে এই পূজো বন্ধ হয়ে যায় । আবার এ পার বাংলায় এসে বহুবছর পর এই পুজো শুরু হয় । এই পুজোর প্রচুর কাহিনী আছে । দত্ত বাড়ির সব থেকে ছোট পুত্র শ্রীমান সৌহার্দ্য দত্ত ওর উদ্যোগেই এই পূজো আবার প্রাণ ফিরে পায় । ছোটবেলায় খেলার ছলে ছোট মূর্তি বানিয়ে পূজো করতে করতে তা আজ এত বড় আকার ধারণ করে । প্রথমত রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজার শুভ সূচনা হয় এবং তার পর জন্মাষ্টমী -র দিন দেবী মূর্তির গায়ে প্রথম মাটির প্রলেপ পরে । আগে বাড়িতেই প্রতিমা নির্মাণ করা হত এবং বাড়ির ছোট ছেলে যে পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা সৌহার্দ্য ও নিজে ই প্রতিমা নির্মাণ করত , কিন্তু বর্তমানে জায়গার অভবে ও বিভিন্ন অসুবিধার কারণে তা বাড়িতে করা আর সম্ভব হয় না । আমাদের আগে দেশের বাড়িতে যা নিয়ম মানা হত তা প্রায় সব ই মানা হয় কোন পরিবর্তন করা হয় নি , শুধু আগে পশু বলি হত এখন ফল বলি হয় ।আমাদের প্রতিপদ থেকে কল্পারম্ভ র পূজো শুরু হয় এবং নিত্য অন্ন ভোগ ও হয় । প্রতিপদ থেকেই নিত্য ২ প্রকার চন্ডী পাঠ হয় । তিথি ভিত্তি তে দেবীকে ভোগ , ভাজা , তরকারি ও মিষ্টি নিবেদন করা হয় , যেমন :- সপ্তমী তে ৭ রকমের ভাজা + ৭ রকমের তরকারি + ৭রকমের মিষ্টি ইত্যাদি , অষ্টামী যে ৮ রকমের নবমী তে ৯ রকমের , দশমী তে ১০ রকমের সব জিনিস দিয়ে এছাড়া মহাষ্টমী ও মহানবমী র দিন দেবী র মহা ভোগ বা রাজ ভোগ হয় । প্রতিদিন দেবীর আলাদা আলাদা রকমের ভোগ হয় এবং তিনবেলা ই ভোগ নিবেদন করা হয় । প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাম কীর্তন এর আসর বসে , আগে দেশেরবাড়িতে যাত্রা পালার আসর বসত কিন্তু এখন সেটি আর হয় না । দেবীকে নিত্য নতুন বেনারসী কাপড় পড়ানো হয় আলাদা আলাদা রং এর , এটি দত্ত বাড়ির একটি বিশেষ রীতি । দেবীর দুই পাশে লক্ষ্মী ও সরস্বতী র মূর্তি থাকে ঠিক ই কিন্তু তাদের জয়া ও বিজয়া রূপে পূজো করা হয়। আমাদের দেবী মূর্তি প্রতিবছর টানা চোখের মুখ হয় কিন্তু প্রতিবছর সাজ পরিবর্তন করা হয় । প্রতিদিন ফল বলি হয় । সপ্তমীর রাত তিথি অনুযায়ী মহাষ্টমীর রাত এ অর্ধরাত্র বিহিত পূজা হয় , এটি অনেকটা সন্ধিপূজোর মতন এই পূজো টি করেন দক্ষিনেশ্বর রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ অদ্যাপীঠ এর মহারাজ ।
এটি সব জায়গায় তেমন দেখা যায় না , খুব অল্প জায়গায় পূজটি হয় ।আমাদের দত্ত বাড়িতেই একমাত্র দুটো পুজো একসঙ্গে হয় অন্য কোথাও এটি তেমন দেখা যায় না । আমাদের জাত পাত এর কোনো ভেদাভেদ নেই সকলের সমান অধিকার থাকে এই পুজোতে । খওয়ার সময় ও সকলে এক আসনে বসে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করেন , কনো জাতির ভেদাভেদ করা হয় না । অষ্টামী ও নবমীর দিন দারিদ্র নারায়ণ ভোজনের একটি বিশেষ রীতি ও রয়েছে । সন্ধিপূজোর সময় দেবীকে সহস্র প্রদীপ ও নৈবেদ্য নিবেদন করা হয় , যেটি অন্যান্য জায়গায় তেমন দেখতে পাওয়া যায় না । আমাদের আরতির খুব দেখার মতন , কথিত আরতির সময় যদি দেবীর চোখের মাহাত্ম অন্য রকম । আরতির সময় দেবীর চোখের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছু বলেন দেবী নাকি তাঁর সমস্ত আশা পূর্ণ করেন , বহু মানুষ দূর দূর থেকে আসেন এটি দেখার জন্য এবং অনেকের অনেক আসও নাকি পূরণ হয়েছে। ওর জন্য বহু মানুষ মা কে গয়না , বেনারসী শাড়ি ও ভোগ দেন । আমাদের বাড়িতে সবাই সব কিছু দেন এবং মা কে সবই নিবেদন করা হয় যে যা দেন , যার যা মানুষিক এর পুজো থাকে । দশমীর দিন দেবী মূর্তির বিসর্জন হয় না । দশমীর দিন দেবীকে ভোগ এ শীতল পান্তা , কচুর সাগ , ডালের বড়া , ১০ রকমের ভাজা দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয় । দশমীর দিন দেবীকে মাছ , পিঠা ও ঘি এর প্রদীপ দিয়ে দেবীকে যাত্রা করানো হয় । প্রতিমা বিসর্জন এর সময় কনকাঞ্জলি হয় । আমাদের দেবীকে কুমারী রূপে পূজো করা হয় । এ ছাড়া মহানবমী র দিন আলাদা করে কুমারী পুজোর ব্যাবস্থা থাকে । ৬ বছরের একটি মেয়ে কে সাজিয়ে কুমারীর আসনে বসিয়ে কুমারিপূজা করা হয় , আগে ৯জন কন্যাকে কুমারী পূজা করা হত কিন্তু এখন তা আর হয় না এখন একজন কেই পূজো করা হয় । নিত্য ( প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত) দেবীকে নতুন বেনারসী কাপড় পড়ানো হয় এবং তার সঙ্গে থাকে গয়না ।
তবে পুজোর প্রতিদিন আগে বাড়ির কুল দেবী (জগৎজননী আদ্যা মা) পূজো হবে তার পর দেবীর পূজো শুরু হবে এবং ভোগের ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়ম । দশমীর দিন ৫টা ঢাক ও ধুনোচি নাচের তালে দেবীকে নিরঞ্জন করা হয় । আবার ৩দিন পর ওই কাঠামো নিয়ে আসা হয় । পুজোর কয়েক দিন বাড়ির সবাই একজায়গায় মিলিত হয় যারা দেশ বিদেশে থাকেন তারাও আসেন এই পূজো তে। আবার একটি বছরের অপেক্ষা ।।
Courtesy By: Souhardya Dutta
No comments:
Post a Comment